ঢাকা ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো এম.পি.ও নীতিমালা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুন ২০১৮
  • ৬৬৬ বার

অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো এম.পি.ও. নীতিমালা-২০১৮ জারি করেছেন। এই নীতিমালা পাঠ করে অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, ঘোষিত নীতিমালার ৯৫% ইতিবাচক। শিক্ষানীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নীতিমালা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা ব্যবস্থা আরো আধুনিক ও গতিশীল হবে। সরকারের ঘোষিত নীতিমালার বেশকিছু ভাল দিক বিষয়ে তিনি আলোকপাত করে বলেন:-

১. অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালার -খ তে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাধ্যক্ষ
হিসাবে ৩ বছরের অভিজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে। সে কারনে কোন প্রভাষক কিংবা সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে অধ্যক্ষ হতে পারবেন না। তাকে অবশ্যই উপাধ্যক্ষ হিসেবে প্রশাসনিক কাজের পূর্ব-অভিজ্ঞা থাকতে হবে। এটি একটি উৎকৃষ্ট সিদ্ধান্ত। এই নীতিমালা প্রণয়নের আগে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ পর্যায়ে উপাধ্যক্ষ পদ ছিল না, উপাধ্যক্ষ পদটি সৃষ্টি করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এ সিদ্ধান্ত গুরুত্বপুণ ভূমিকা রাখবে।

২. নীতিমালার ১১.৬ ধারায় শিক্ষকদের নিয়োগের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ বছর। অর্থাৎ ৩৫ বছরের ঊর্ধে যারা তারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। এই নীতিমালা প্রণয়নের আগে ৪০-৪৫ বছরের মধ্যবয়সী শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষ করে দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কোন ব্যক্তি শিক্ষকতা পেশায় এসে ভাল শিক্ষক হতে পারেন না। এ কারণে ৩৫ বছরের কম বয়সীগণ যেহেতু স্টাডির সাথে সম্পৃক্ত থাকেন সেহেতু তারা শিক্ষাদানে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। নীতিমালার এ বিষয়টি সদ্য উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করা বিপুল সংখ্যক বেকারদের কমসংস্থানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এ ধারার আরেকটি অংশে শিক্ষক হিসেবে চাকুরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা আগের মতোই ৬০ বছর করা হয়েছে, তবে কোন অবস্থাতেই ষাটোর্ধ শিক্ষকের চুক্তিভিত্তিক কিংবা পুন:নিয়োগের সুযোগ থাকছে না। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত, কারণ যেখানে যোগ্যতা সম্পন্ন অসংখ্য শিক্ষিত বেকারের কর্ম সংস্থান হচ্ছে না সেখানে পদ ধরে রাখার কোন অথ হয় না। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গভর্নিং বডিকে প্রভাবিত করে কিংবা ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকেরা চুক্তিভিত্তিক কিংবা পুন:নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এই অনৈতিক সুবিধাবাদী একটি প্রথা বাতিল হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ খুশি হবে।

তবে চাকুরি গ্রহণের বয়সসীমা যেহেতু ৩৫ বছরে উন্নীত হয়েছে এবং বাংলাদেশের গড় আয়ু আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে তাই শিক্ষকতা চাকুরির সর্বোচ্চসীমা সংশোধন করে ৬২ বছর করা যেতে পারে।

৩. এই নীতিমালায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মোতাবেক প্রত্যেকটি বিষয়ে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি অর্থাৎ সরকার এই তিনজন শিক্ষকের মধ্যে তৃতীয় শিক্ষককে এমপিও সুবিধা দিতেন না। বতমান ঘোষিত নীতিমালায় তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হচ্ছেন, সারাদেশে হাজার হাজার শিক্ষক যারা নিদারুন কষ্টে ছিলেন তারা খুশি হবেন এবং সরকারের এ সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের শত-শত কলেজে অনাস ও মাস্টাস কোস চালু করা হয়েছে, এজন্য কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। যোগ্যতা সম্পন্ন এই শিক্ষকগণ সরকারের এমপিও পান না। এ সমস্ত কলেজে উচ্চশিক্ষা চলছে, শিক্ষার সকল কাযক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ সরকারি বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। তারা কলেজ থেকে সামান্য কিছু সম্মানী পেয়ে থাকেন, যা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। সদাশয় সরকার অনার্স-মাস্টাস এই শিক্ষকদের এমপিও ব্যবস্থা করলে একটি যুগান্তকারী প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত হবে।

৪. এই নীতিমালার আরেকটি ভালো দিক হলো স্কুল-কলেজে কিছু সংখ্যক নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। আজকের এই পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপন করে পৃথিবীর ৫৩টি দেশের মর্যাদাপূণ সেটেলাইট ক্লাবের সদস্য হতে পেরেছে বাংলাদেশ। সামগ্রিক অগ্রগতির স্বার্থে, কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারসহ সার্বিক উন্নয়নে সরকারের ঘোষিত নীতিমালা প্রণয়ন করে বিজ্ঞান শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ল্যাবরেটরিকে উন্নত অবকাঠামো দেওয়া এবং জনবল কাঠামোতে বেশকিছু সংখ্যক পদ সৃজন করা হয়েছে। স্কুল কলেজে প্রত্যেকটি বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক এবং কলেজে প্রত্যেক বিষয়ে প্রদর্শক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে । বিজ্ঞানাগারে ল্যাব সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে এবং অথনৈতিক এগিয়ে নিতে অবশ্যই সহায়তা করবে। নতুন করে পরিচন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, নৈশ্যপ্রহরী, আয়া পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

৫. এই নীতিমালার ১২ ধারায়, শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি অস্পষ্ট বলে আমার মনে হয়। কারণ, এখানে বলা হয়েছে ‘সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের প্রয়োজন বোধে নীতিমালা প্রণয়ন করে বদলি করতে পারবে।’ এটি স্পষ্ট হওয়া দরকার। কারণ, বাংলাদেশের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা যে নেতিবাচক একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, কিছু কিছু বিষয়ের শিক্ষককে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে বা বাহিরে বাণিজ্যিক চিন্তাধারায় প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টার খুলে বসেন। এই জন্য বদলির বিষয়টি বাঞ্ছনীয়। এই ক্ষেত্রে নীতিমালাটি সংশোধন করে স্পষ্টিকরণ করা যেতে পারে, ‘সরকার প্রয়োজন মনে করলে বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’ যেহেতু এখানে শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি আসবে তাই শিক্ষকদের সম্পূর্ণ বাড়ী ভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদার বিষয়টি সরকারকে সক্রিয়ভাবে ভাবতে হবে। ২০১০ সনে বতমান সরকারের ঘোষিত শিক্ষানীতি মোতাবেক শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়নের দিকে যেতে হবে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেই ‘টোটাল- এডুকেশন-সিস্টেম’ নিয়ে আসতে হবে, প্রতিষ্ঠানের বাইরে ‘কমাশিয়াল-এডুকেশন’ বন্ধ করতে হবে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো এম.পি.ও. নীতিমালা-২০১৮ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে আমি মনে করি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো এম.পি.ও নীতিমালা

আপডেট টাইম : ১১:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুন ২০১৮

অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো এম.পি.ও. নীতিমালা-২০১৮ জারি করেছেন। এই নীতিমালা পাঠ করে অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, ঘোষিত নীতিমালার ৯৫% ইতিবাচক। শিক্ষানীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নীতিমালা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা ব্যবস্থা আরো আধুনিক ও গতিশীল হবে। সরকারের ঘোষিত নীতিমালার বেশকিছু ভাল দিক বিষয়ে তিনি আলোকপাত করে বলেন:-

১. অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালার -খ তে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাধ্যক্ষ
হিসাবে ৩ বছরের অভিজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে। সে কারনে কোন প্রভাষক কিংবা সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে অধ্যক্ষ হতে পারবেন না। তাকে অবশ্যই উপাধ্যক্ষ হিসেবে প্রশাসনিক কাজের পূর্ব-অভিজ্ঞা থাকতে হবে। এটি একটি উৎকৃষ্ট সিদ্ধান্ত। এই নীতিমালা প্রণয়নের আগে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ পর্যায়ে উপাধ্যক্ষ পদ ছিল না, উপাধ্যক্ষ পদটি সৃষ্টি করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এ সিদ্ধান্ত গুরুত্বপুণ ভূমিকা রাখবে।

২. নীতিমালার ১১.৬ ধারায় শিক্ষকদের নিয়োগের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ বছর। অর্থাৎ ৩৫ বছরের ঊর্ধে যারা তারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। এই নীতিমালা প্রণয়নের আগে ৪০-৪৫ বছরের মধ্যবয়সী শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষ করে দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কোন ব্যক্তি শিক্ষকতা পেশায় এসে ভাল শিক্ষক হতে পারেন না। এ কারণে ৩৫ বছরের কম বয়সীগণ যেহেতু স্টাডির সাথে সম্পৃক্ত থাকেন সেহেতু তারা শিক্ষাদানে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। নীতিমালার এ বিষয়টি সদ্য উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করা বিপুল সংখ্যক বেকারদের কমসংস্থানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এ ধারার আরেকটি অংশে শিক্ষক হিসেবে চাকুরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা আগের মতোই ৬০ বছর করা হয়েছে, তবে কোন অবস্থাতেই ষাটোর্ধ শিক্ষকের চুক্তিভিত্তিক কিংবা পুন:নিয়োগের সুযোগ থাকছে না। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত, কারণ যেখানে যোগ্যতা সম্পন্ন অসংখ্য শিক্ষিত বেকারের কর্ম সংস্থান হচ্ছে না সেখানে পদ ধরে রাখার কোন অথ হয় না। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গভর্নিং বডিকে প্রভাবিত করে কিংবা ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকেরা চুক্তিভিত্তিক কিংবা পুন:নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এই অনৈতিক সুবিধাবাদী একটি প্রথা বাতিল হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ খুশি হবে।

তবে চাকুরি গ্রহণের বয়সসীমা যেহেতু ৩৫ বছরে উন্নীত হয়েছে এবং বাংলাদেশের গড় আয়ু আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে তাই শিক্ষকতা চাকুরির সর্বোচ্চসীমা সংশোধন করে ৬২ বছর করা যেতে পারে।

৩. এই নীতিমালায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মোতাবেক প্রত্যেকটি বিষয়ে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি অর্থাৎ সরকার এই তিনজন শিক্ষকের মধ্যে তৃতীয় শিক্ষককে এমপিও সুবিধা দিতেন না। বতমান ঘোষিত নীতিমালায় তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হচ্ছেন, সারাদেশে হাজার হাজার শিক্ষক যারা নিদারুন কষ্টে ছিলেন তারা খুশি হবেন এবং সরকারের এ সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের শত-শত কলেজে অনাস ও মাস্টাস কোস চালু করা হয়েছে, এজন্য কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। যোগ্যতা সম্পন্ন এই শিক্ষকগণ সরকারের এমপিও পান না। এ সমস্ত কলেজে উচ্চশিক্ষা চলছে, শিক্ষার সকল কাযক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ সরকারি বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। তারা কলেজ থেকে সামান্য কিছু সম্মানী পেয়ে থাকেন, যা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। সদাশয় সরকার অনার্স-মাস্টাস এই শিক্ষকদের এমপিও ব্যবস্থা করলে একটি যুগান্তকারী প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত হবে।

৪. এই নীতিমালার আরেকটি ভালো দিক হলো স্কুল-কলেজে কিছু সংখ্যক নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। আজকের এই পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপন করে পৃথিবীর ৫৩টি দেশের মর্যাদাপূণ সেটেলাইট ক্লাবের সদস্য হতে পেরেছে বাংলাদেশ। সামগ্রিক অগ্রগতির স্বার্থে, কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারসহ সার্বিক উন্নয়নে সরকারের ঘোষিত নীতিমালা প্রণয়ন করে বিজ্ঞান শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ল্যাবরেটরিকে উন্নত অবকাঠামো দেওয়া এবং জনবল কাঠামোতে বেশকিছু সংখ্যক পদ সৃজন করা হয়েছে। স্কুল কলেজে প্রত্যেকটি বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক এবং কলেজে প্রত্যেক বিষয়ে প্রদর্শক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে । বিজ্ঞানাগারে ল্যাব সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে এবং অথনৈতিক এগিয়ে নিতে অবশ্যই সহায়তা করবে। নতুন করে পরিচন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, নৈশ্যপ্রহরী, আয়া পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

৫. এই নীতিমালার ১২ ধারায়, শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি অস্পষ্ট বলে আমার মনে হয়। কারণ, এখানে বলা হয়েছে ‘সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের প্রয়োজন বোধে নীতিমালা প্রণয়ন করে বদলি করতে পারবে।’ এটি স্পষ্ট হওয়া দরকার। কারণ, বাংলাদেশের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা যে নেতিবাচক একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, কিছু কিছু বিষয়ের শিক্ষককে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে বা বাহিরে বাণিজ্যিক চিন্তাধারায় প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টার খুলে বসেন। এই জন্য বদলির বিষয়টি বাঞ্ছনীয়। এই ক্ষেত্রে নীতিমালাটি সংশোধন করে স্পষ্টিকরণ করা যেতে পারে, ‘সরকার প্রয়োজন মনে করলে বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’ যেহেতু এখানে শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি আসবে তাই শিক্ষকদের সম্পূর্ণ বাড়ী ভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদার বিষয়টি সরকারকে সক্রিয়ভাবে ভাবতে হবে। ২০১০ সনে বতমান সরকারের ঘোষিত শিক্ষানীতি মোতাবেক শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়নের দিকে যেতে হবে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেই ‘টোটাল- এডুকেশন-সিস্টেম’ নিয়ে আসতে হবে, প্রতিষ্ঠানের বাইরে ‘কমাশিয়াল-এডুকেশন’ বন্ধ করতে হবে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো এম.পি.ও. নীতিমালা-২০১৮ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে আমি মনে করি।